রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান সমূহ:
রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান সমূহ: বাংলার সিল্কসিটির অপার সৌন্দর্যের খোঁজে
ভূমিকা:
১. পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার (সোমপুর মহাবিহার)
অবস্থান: রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায়, রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের অন্যতম পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য। খ্রিস্টীয় ৮ম শতকে পাল রাজা ধর্মপালের সময়ে নির্মিত এই মহাবিহার প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত ছিল। এখানে রয়েছে বিশাল আকারের স্তূপ, খোদাই করা ইটের কারুকাজ এবং পুরাতন সভ্যতার নানা নিদর্শন। ইতিহাস প্রেমীদের জন্য এটি এক অনন্য স্থান।
২. বরেন্দ্র জাদুঘর
অবস্থান: রাজশাহী নগরীর হৃদয়ে, সদর থানার অন্তর্গত।
১৮১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বরেন্দ্র জাদুঘর হলো বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন জাদুঘর। এখানে ২০,০০০-এরও বেশি পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বুদ্ধদেবের মূর্তি, হিন্দু-পুরাণের প্রত্নবস্তু এবং মুসলিম শাসনামলের নিদর্শন। শিক্ষার্থীদের ইতিহাস অন্বেষণ কিংবা পর্যটকদের জন্য এটি অবশ্যই ঘুরে দেখার মতো।
৩. পদ্মা নদীর পাড় (Padma Riverside)
পদ্মা নদী রাজশাহীর প্রাণ। পদ্মার পাড়ে বিকেলের সূর্যাস্ত উপভোগ, নৌকায় ভ্রমণ কিংবা হিম হিম বাতাসে হাঁটা যে কাউকে মোহিত করবে। শহরের সাহেব বাজার এলাকা থেকে সহজেই পদ্মা পাড়ে যাওয়া যায়। বিশেষ করে গ্রীষ্মে আমের মৌসুমে পদ্মার পাড়ে বসে আম খাওয়ার মজাই আলাদা।
৪. শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান (চকগোবিন্দ উদ্যান)
রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই উদ্যান শিশু, পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ঘোরাফেরা করার আদর্শ স্থান। সবুজ ঘাস, সুসজ্জিত ফুলের বাগান এবং খেলাধুলার সুব্যবস্থা এখানকার বিশেষ আকর্ষণ।
৫. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও সৌন্দর্য্যমণ্ডিত ক্যাম্পাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। বিশাল গেট, ছায়াঘেরা রাস্তা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, শহীদ মিনার এবং বিভিন্ন ভবনের স্থাপত্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। শিক্ষার পাশাপাশি এটি প্রকৃতি ও স্থাপত্য ভালোবাসা মানুষের জন্য দর্শনীয় স্থান।
৬. পুঠিয়া রাজবাড়ী কমপ্লেক্স
অবস্থান: রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে, পুঠিয়া উপজেলা।
পুঠিয়া রাজবাড়ী কমপ্লেক্সে রয়েছে প্রাচীন জমিদার বাড়ি, শিবমন্দির, গোবিন্দ মন্দির এবং দুর্গামন্দির। এই স্থান বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন হিন্দু স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন। লাল ইটের কারুকাজ, সুউচ্চ মন্দির এবং খাল-বিল পরিবেষ্টিত রাজবাড়ি পর্যটকদের নজর কাড়ে।
৭. বাঘা মসজিদ
অবস্থান: বাঘা উপজেলা, রাজশাহী থেকে ২৫ কি মিঃ দূরে
১৫২৩ সালে সুলতান নাসিরউদ্দিন নসরত শাহ নির্মিত বাঘা মসজিদ বাংলাদেশের ইসলামি স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। লাল ইটের দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ, টেরাকোটার অলংকরণ এবং বিশাল জলাশয় মসজিদের চারপাশকে আরো মনোরম করেছে।
৮. সারদা পুলিশ একাডেমি
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ঐতিহ্যবাহী ট্রেনিং সেন্টার সারদা একাডেমি। সুন্দর সাজানো গোছানো ক্যাম্পাস, প্রশিক্ষণ প্রাঙ্গণ এবং বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়।
৯. আমের বাগান ও আম গবেষণা কেন্দ্র
রাজশাহীকে বলা হয় "আমের রাজধানী"। গ্রীষ্মে শহরের আশেপাশে আমের বাগান চোখে পড়ে। ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি , আম রুপালি, গোপাল ভোগ, সহ নানা জাতের আমের স্বাদ নিতে চাইলে রাজশাহীর বাগানগুলো ঘুরে আসুন। শহরের পার্শ্ববর্তী চারঘাট, বাঘা এবং পুঠিয়ার বাগানগুলো বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
১০. সিল্ক শিল্প কেন্দ্র
রাজশাহী বিখ্যাত সিল্ক কাপড়ের জন্য। শহরের সিল্ক ফ্যাক্টরি কিংবা মার্কেটে ঘুরে আপনি দেখতে পারবেন সিল্ক তৈরির প্রক্রিয়া এবং কিনতে পারবেন রাজশাহীর বিখ্যাত সিল্ক শাড়ি ও পোশাক।
সমাপ্তি কথা
রাজশাহী শুধু বাংলাদেশের একটি বিভাগ বা শহর নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আধুনিক জীবনের সম্মিলিত এক রত্নভাণ্ডার। দেশের বাইরে কিংবা দেশের ভেতর থেকে ঘুরতে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য রাজশাহীর দর্শনীয় স্থানগুলো নিঃসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আপনি যদি প্রকৃতি, ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে একসাথে অনুভব করতে চান, তাহলে রাজশাহী হতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণের আদর্শ গন্তব্য।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url