আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার সেরা দশ টি উপায়
আল্লাহর অনুগত্য এবং ভালোবাসা পাওয়ার সেরা দশ টি উপায়
ভূমিকা
দুজাহানের মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ১৮ হাজার মাখলুকাতের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হলো মানুষ। মানুষকে আল্লাহ তা'আলা সবচাইতে বেশি ভালোবাসে মহান আল্লাহ তায়ালা এক এবং অদ্বিতীয়। তার কোন শরীক নেই তিনি কারো হুকুম পালন করেন না সবাই তার হুকুম পালন করতে বাধ্য । তিনি বিচার দিবসের মালিক দুনিয়া তে বান্দার ভালো মন্দ কাজের হিসাব নেওয়ার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কারণ প্রতিটি সৃষ্টির পিছনে কিছু কারণ থাকে আর মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ইবাদতের জন্য।
আসুন জেনে নিই আল্লাহ তায়ালার অনুগত্য ভালবাসা লাভের দশটি উপায় সম্পর্কে।
১, নিয়মিত গোপনে দান করা
হাদিসে উল্লেখ করেছেন যে ব্যক্তি গোপনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় দান করে কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে স্থান পাবে। গোপনে আল্লাহর রাস্তায় দান করা কে আল্লাহ তায়ালা খুব পছন্দ করেন। আর বলা হয়েছে এমন ভাবে দান করো যেন তুমি ডান হাতে দান করলে তোমার বাম হাতে বুঝতে না পারে। দান গোপনে করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঐ বান্দাকে ভালোবাসে, এবং গোপনে দান করলে আল্লাহ বান্দার ধন সম্পদকে রহমত দ্বারা ভরপুর করে দেন।
২, রাতে উঠে তাহাজ্জুদের নফল নামাজ পড়া
আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পাওয়ার আরও একটি মাধ্যম হচ্ছে গভীর রাতে উঠে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তাহাজ্জুদের নফল নামাজ আদায় করা। কারণ এই সময় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সরাসরি জমিনে অবস্থান করেন,এবং বান্দাদের বলতে থাকেন যে কে আছো এমন আমার কাছে চাও আমি এখন আমার সকল নেক বান্দার চাওয়া পূরণ করতে বদ্ধপরিকর। তাহাজ্জুদের নফল নামাজের মাধ্যমে দিয়ে বান্দা আল্লাহর খুব কাছাকাছি চলে যায় এবং আল্লাহর ভালোবাসা আনুগত্য লাভ করে।
৩, মাফ করে দেয়ার অভ্যাস করা
ইসলামের মাপ করা বলতে মূলত ক্ষমা করা বা মার্জনা করাকে বোঝায়। এই অর্থ হল কেউ যদি কোন ভুল করে বা কারো প্রতি অন্যায় করে তবে তার প্রতি সহানুভূতি দেখানো। রাগ বা বিদ্বেষ পরিহার করে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া এটি একটি ঐচ্ছিক গুণ যা মহানুভবতা এবং সহানুভূতির পরিচয় বহন করে ইসলামের ক্ষমা করার গুরুত্ব অপরিসীম যা ব্যক্তি ও সমাজের শান্তি সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
৪, নিজেকে অহংকার থেকে মুক্ত রাখা
ইসলামের নিজেকে অহংকার থেকে মুক্ত রাখা বলতে নিজের মধ্যে বিনয় ও নম্রতা বজায় রাখা এবং নিজেকে অন্যের চেয়ে বড় শ্রেষ্ঠ না ভাবাকে বোঝায়। নিজেকে সবসময় বিনয়ী রাখা এবং আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা। এটি ইসলামের শিক্ষা অহংকার একটি মারাত্মক ব্যাধি যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ইসলামে অহংকারকে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে । কারণ এটি শয়তানের বৈশিষ্ট্য । ইবলিশ সর্বপ্রথম আল্লাহর হুকুম অমান্য করেছিল এবং নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি।তাই একজন মুসলিমের উচিত নিজেকে অহংকার থেকে মুক্ত রাখা এবং সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকা । অহংকার থেকে মুক্ত থাকার উপায় হিসেবে ইসলামের বিনয় নম্রতা কৃতজ্ঞতা এবং অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। নিজেকে অহংকার থেকে মুক্ত রাখলে আল্লাহর ভালোবাসা এবং আনুগত্য লাভ করা যায় খুব সহজে।
৫, নিরবে কোরআন তেলাওয়াত করা
ইসলামের নীরবে কোরআন তেলাওয়াত করাকে কিরাত বলা হয় এটি এমন একটি ইবাদত যেখানে কুরআন তেলাওয়াত করা হয় তবে শব্দ করে নয় বরং মনে মনে যা অন্যদের কানে শোনা যায় না। একে কিরাতি খাফি তেলাওয়াত বা নীরব তেলাওয়াত বলা হয়। ইসলামে কুরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। নিরবে কোরআন তেলাওয়াত করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম। নিরবে তেলাওয়াতের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি আল্লাহর কালাম নিয়ে চিন্তাভাবনা ও গবেষণা করার সুযোগ পায়।যাতাকে আরো বেশি সওয়াব এনে দেয়।
৬, দ্বীনি শিক্ষা করা এবং দ্বীন শিক্ষা দেওয়া
দ্বীনি শিক্ষা করা এবং দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া দুটোই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ যা মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে এবং চলতে সাহায্য করে। একই সাথে দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে এবং মানুষের সঠিক পথ দেখায়। দ্বীন শিক্ষা হলো কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জীবনকে পরিচালনা করা এবং এর প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও মূল্যবোধ অর্জন করা। আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের আশায় যারা দিন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয় তারা আল্লাহর ভালবাসা লাভ করে খুব সহজে।
৭, অভ্যাসগত গুনাহ থেকে সরে আসে
গুনাহের পরকালীন শাস্তির কথা আমরা সবাই জানি, কিন্তু আমরা অনেকে গুনাহে ইহকালীন কুপ্রভাব সম্পর্কে জানি না আসলে আমাদের ব্যক্তি জীবনে পারিবারিক জীবনের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে গুনাহের অনেক সুপ্রভাব রয়েছে। গুনা আমাদের জীবনকে প্রবাহিত ও নিয়ন্ত্রণ করে কখনো কখনো ব্যক্তির করা গুনাহের প্রভাব ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে আবার কখনো সেই প্রভাব ব্যক্তিকে ছা রিয়ে পরিবার সমাজ রাষ্ট্র এমনকি সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। গুনাহকারীকে আল্লাহ অপছন্দ করে তাই আমরা ছোট ছোট গুনাহ করা থেকে সরে আসবো। বিশেষ করে সগিরা কবিরা দুই ধরনের গুনাহ থেকে আমরা চিরতরে সরে আসার চেষ্টা করব এবং আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার আশা রাখবো।
৮, আত্মবিশ্বাসের সাথে তাওয়াক্কুল করা
আত্মবিশ্বাসের সাথে তাওয়াক্কুল করা মানে হল কোন কাজ করার আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও চেষ্টা করার পর ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা। এবং তার সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, এটাই কেবল ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া নয় বরং নিজের সাধ্য মতচেষ্টা করে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখা যে তিনিই ভালো ফয়সালার মালিক। আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে সকল কাজ আল্লাহর জন্য ছেড়ে দেয় করলে আল্লাহর সে কাজে বরকত দান করে এবং আল্লাহর ভালোবাসার সন্তুষ্টি লাভ করা যায় খুব সহজে।
৯, তওবার জন্য নির্ধারিত সবাই ঠিক করা
তওবা করার জন্য নিজের নির্ধারিত সময় ঠিক করা বলতে বোঝায় গুনাহ থেকে ফিরে আসার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি কোন পাপ কাজ করার পর সেই কাজ থেকে ফিরে আসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা চায় তবে সে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে পারে। যেহেতু অমুক তারিখ থেকে সে আর এই কাজটি করবে না এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে এটি একটি মানসিক প্রস্তুতি এবং আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার অঙ্গীকার। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অসীম দয়া সাগর। তিনি বান্দাকে ক্ষমা করতে খুব পছন্দ করেন। বান্দা গুনাহার করার পর যদি সে তার নিজের ভুল বুঝতে পারে, পেরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ খুশি হয় এবং সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়।
১০, মানুষের উপকারে আসে এরকম ছোট ছোট কাজের অভ্যাস করা
মানুষের উপকারে আসে এরকম ছোট ছোট কাজ বলতে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাজিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলাল্লাহ সাঃবলেন, প্রতিটি ভাল কাজই দান তুল্য হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম উম্মতকে ভালো কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন মুসলিমরা যেন কোন ভালো কাজকে ছোট করে না দেখে, কেননা ছোট-বড় সব নেক আমলই পরকালের মুমিনদের জন্য সুপারিশ করবে। তাই মানুষের উপকারে আসে এরকম ছোট ছোট কাজ গুলোকে আমরা করার অভ্যাস করব। এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাককুল লাভের আশায় রাখবো। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
লেখকের শেষ কথা
যার জন্ম আছে তার মৃত্যু আছে, এই কথা মনে প্রানে বিশ্বাস করতে হবে। মৃত্যুর পর মানুষের আর একটা জগত আছে যেখানে সবাইকে পুনরোজ্জীবিত করা হবে। দুনিয়ার সকল ভালো মন্দ কাজের হিসাব পরকালের হিসাব নেওয়া হবে। যার যার কর্মের পুরস্কার সেদিন বুঝিয়ে দেওয়া হবে ভালো কাজ করলে আল্লাহর হুকুম এবং নবীর দেখানোর পথে চললে ফয়সালা ভালো হবে। আর আল্লাহর হুকুম আর নবীর দেখানো পথে না চললে তার জন্য রয়েছে ভয়ানক শাস্তির ব্যবস্থা। যাকে বলা হয় জাহান্নাম। তাই আসুন আমরা নিজে ভালো কাজ করি এবং আল্লাহর হুকুম মেনে চলি। অপরকেও আল্লাহর হুকুম মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আল্লাহর হুকুম এবং নবীর দেখানো পথে চলার তৌফিক দান করুন আমীন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url