আশুরার দিনের তাৎপর্য ভূমিকা
জেনে নিন পবিত্র আশুরার দিনের তাৎপর্য ভূমিকা ও ফজিলত সম্পর্কে
ভূমিকা
আগামী ৬ জুলাই ২০২৫ পবিত্র আশুরার দিন। মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও ফজিলতময় দিন এই আশুরা। আশুরা শুধু কারবালার বিষাদের স্মৃতি নয়, বরং এর রয়েছে নবী-রাসূলদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং অতুলনীয় শিক্ষা।
আশুরার সংজ্ঞা ও তাৎপর্য:
আরবি শব্দ 'আশারা' অর্থ দশ। হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররমের দশম দিনকে পবিত্র আশুরা বলা হয়। এই দিনটি ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "মহররমের দশম দিন রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।" (সহীহ মুসলিম)
ইসলামের ইতিহাসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই দিনে সংঘটিত হয়েছে।
আশুরার উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
১. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আসমান-জমিন সৃষ্টি করেন।
২. নবী মূসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা ফেরাউন থেকে মুক্তি পান।
৩. নবী নূহ (আ.)-এর কিস্তি জুদী পর্বতে ভিড়ে।
৪. নবী ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান।
৫. কারবালার করুণ ট্র্যাজেডি সংঘটিত হয়, যেখানে ইমাম হোসাইন (রা.) শহীদ হন।
আশুরার ফজিলত:
পবিত্র আশুরার দিন বিশেষভাবে ইবাদত ও তাওবা করার মাধ্যমে অতীতের গুনাহ মোচনের সুবর্ণ সুযোগ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "আমি আশা করি যে, মহররমের দশম দিনের রোজা এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।" (সহীহ মুসলিম)
নাসির উদ্দিনের করণীয়:
নাসির উদ্দিন মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসেবে আশুরার দিনের ফজিলতকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো উচিত।
নাসির উদ্দিনের জন্য করণীয় তালিকা:
১. আশুরার রোজা রাখা: ৯ এবং ১০ অথবা ১০ এবং ১১ মহররম রোজা রাখা সুন্নাত। এককভাবে শুধু দশম দিন না রেখে আগের বা পরের দিনসহ রোজা রাখা উত্তম।
২. ইবাদত ও তাওবা: বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দরুদ শরীফ পড়া। অতীতের গুনাহের জন্য খালিস মনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৩. সদকা ও খায়রাত: গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা, এতিম ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো। এটি আশুরার দিনের বড় ফজিলতের কাজ।
৪. পরিবারের খরচ বৃদ্ধি করা: রাসূল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারের উপর ব্যয় বৃদ্ধি করবে, আল্লাহ তাআলা সারাবছর তার রিজিক বৃদ্ধি করবেন।" (বায়হাকি)
৫. কারবালার ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া: ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ত্যাগ ও সত্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান থেকে আত্মিক শিক্ষা গ্রহণ। অন্যায়, জুলুম, অন্ধকারের বিরুদ্ধে সচেতন থাকা।
পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ ও তাদের রেখে যাওয়া শিক্ষা:
আমাদের পূর্বপুরুষরা আশুরার দিনে নানাভাবে ধর্মীয় চেতনাকে জাগ্রত রাখতেন। তাঁরা আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসাধারণ কিছু শিক্ষা ও আশীর্বাদ:
পূর্বপুরুষদের করণীয় ও আশীর্বাদ:
১. পারিবারিক বন্ধনের জোরদার: তাঁরা আশুরার দিনে সবাইকে একত্রিত করতেন, পারস্পরিক ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তুলতেন।
২. সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান: ছোটবেলা থেকেই আশুরার তাৎপর্য বোঝাতেন, রোজার ফজিলত শেখাতেন। এতে করে ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত হতো।
৩. আল্লাহর প্রতি ভরসা: তাঁরা কঠিন সময়ে আল্লাহর সাহায্য কামনা করতেন, যা আমাদের আত্মবিশ্বাস ও ঈমান দৃঢ় করতে সহায়ক।
৪. সাহস ও ত্যাগের শিক্ষা: ইমাম হোসাইনের জীবন থেকে তাঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার শিক্ষা দিতেন।
৫. মানবিকতা ও সহানুভূতি: আশুরার দিন তাঁরা গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়াতেন, যা আমাদেরও মানবিক হতে অনুপ্রাণিত করে।
উপসংহার:
পবিত্র আশুরার দিন মুসলমানদের জন্য বিশেষ ফজিলতের দিন। এই দিনে নাসির উদ্দিনের মতো প্রতিটি মুসলমানের উচিত রোজা রাখা, ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা, দুঃখী-অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজের জীবন আলোকিত করা। আমাদের পূর্বপুরুষরা যে ধর্মীয় শিক্ষা ও ঐতিহ্য রেখে গেছেন, তা ধরে রাখাই আমাদের মূল দায়িত্ব। এই আশুরা হোক আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ, সাহসিকতা এবং আল্লাহর রহমত অর্জনের মাধ্যম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url